রঙ্গন রায়-এর কবিতা
একটু জীবন
সাদা ভাতের ধোঁয়া ওঠা গন্ধ
যেন শ্মশানের শেষ যাত্রা বানিয়ে উঠে
খেতে বসেছে স্বামী-স্ত্রী
আমরা দেখেছি তাদের রুজি-রোজগার
বাঁশের মাচার মত পলকা একটা জীবন।
আমরা আরো অনেক কিছু দেখেছি-
মৃতদেহের পর মৃতদেহ আসে, চলে যায়,
যেমন কত শ্মশানের মায়া ছুঁয়ে এখানে এসেছে মহানন্দা,
আরো কত জীবন ও মৃত্যুকে বগলদাবা করে
খেলতে খেলতে নিয়ে যাবে
এখানে বসেই এতসব ভেবেছি ,
শিউরে উঠেছি এক দুর্দান্ত বন্ধুর কবিতা শুনে,
পাগলের ঠোঁটে দেখেছি রঙীন সিগারেট –
আহা! প্রেম তুমিও জীবন দেখেছো,
জানো শুধু সাদা ভাতের গন্ধই আমাদের বাস্তব ভালবাসা।
বন্ধুরা ক্যামেরা বিক্রি করে দেয়, তেল-ডাল কিনে আনে …
যা কিছু দেখেছি এই আশ্চর্য্য অন্ধকারে
মনে হয়েছে আমি সব দেখা ছেড়ে
তোমার কাছেই ফিরে আসি, হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ করি –
একটু আলো দেখাও নোটিফিকেশনে
স্বপ্ন দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরে আসি
হলদিবাড়ির কবিতা
কিছু শব্দের প্রতি ঝোঁক অজস্র শব্দের কাছে পৌঁছতে দেয়না।
তাই ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের হাটে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে,
ওখানে ঢুকলেই যে গন্ধটা প্রথম নাকে ধাক্কা মারে
তার জেরেই মাঝে মাঝে মনে হয় দু তিনটে কবিতা
লিখে ফেলতে পারবো অনায়াসে – হয়তো এর জন্যই
বেঁচে ছিলাম এ কটা বছর; প্যাঁচপেচে কাদার মধ্যে
গড়িয়ে আসা থেতলে যাওয়া আলু কিংবা একটা ধর্মের ষাঁড় –
আহা ওখানেই তো থাকবার কথা ছিল! চায়ের দোকানে
হেঁটো ধুতির বুড়োরা বিড়ি খাচ্ছে – ভাঙা গাল কত প্রকট …
শুধু ক্যামেরা বিক্রি হয়ে গেছে বলে আমার বন্ধু হাত-পা
ছুড়ছিল। হাড়িয়ার ঠেকটা খুঁজে পাওয়া যায়নি কিছুতেই,
আমরা ভিন্নগ্রহের প্রাণীর মত জুলজুল করে দেখছিলাম
কতগুলো রান্নাঘর এখানে ভ্রুণ হয়ে আছে —
কালোজিরে – ফোড়নের একটা কেমন যেন গন্ধের আড়ালেই
চাপা পড়ে যাচ্ছি;
অর্শ-ভগন্দরের লিফলেট বিলি করছেন একজন,
গুগলিও বিক্রি হচ্ছে ওপাশে, সাইকেলের পেছনে শুধু একটা
মাইক – থলিতে ইঁদুর মারার ওষুধ … যত এগোচ্ছি জীবন
চড়া সূর্যের মত মনে হচ্ছে , ভালবাসার মত নরম মানুষেরা
হাট করছেন; এখানে কেউ কবিতা নিয়ে আগ্রহী নয়,
হয়তো হীরের দেশের লোক – যারা হীরেকে পাথরের চেয়ে বেশি
আর কিছুই ভাবেনা ; আমাদের স্বাধীনতা শুধু আজকের দিনটিতে,
পালিয়ে এসেছি শহর থেকে, শুনেছি এখানে খুব সস্তায় গ্লাসে গ্লাসে
স্বাধীনতা বিক্রি হয়, ওটাই খুঁজছি তখন থেকে ঐ অনেকক্ষণ ধরেই
সস্তার মোটা চাল খুঁজে চলা আদিবাসী মেয়েটির মত —
Posted in: January 2019, Poetry